মশা তাড়ানোর কিছু কার্যকরী উপায়
মশা এক প্রকারের ছোট মাছি প্রজাতির পতঙ্গ। অধিকাংশ প্রজাতির স্ত্রীমশা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্ত পান করে থাকে। মেরুদণ্ডী প্রাণীর, যেমন স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর প্রাণী এবং এমনকি কিছু মাছ, শরীর থেকে রক্ত শোষণ করে হাজার রকমের প্রজাতি আছে। যদিও যেসব প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত শোষে নেয় তা তাদের শরীরের তুলনায় খুবই অল্প, কিন্তু কিছু মশা রোগজীবাণু সংক্রামক। মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীত জ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতি রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে।
মশার নাম শুনলেও সবার মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এই মশা অনেক সময় মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মশার কামড়ে হতে পারে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর মত মারাত্মক রোগ। একে প্রতিকার করার জন্য কতই না পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। যেমন- মশারি, কয়েল, এরোসল ইত্যাদি। তবে কয়েল কিংবা এরোসল মশা তাড়ালেও আমাদের স্বাস্থ্য এতে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়ানোর কয়েকটি উপায় জেনে নিন-(এখানে ১৪ টি উপায় রয়েছে )
১.টবে লেমন গ্রাস লাগান।থাই লেমন গ্রাসে আছে ‘সাইট্রোনেলা অয়েল’ যা থেকে বের হয় একধরনের শক্তিশালী সুগন্ধ। এই সুগন্ধ কিন্তু মশাদের যম। মশারা এর কাছেও ঘেঁষে না। ফলে আপনার আশেপাশে লেমন গ্রাসের ঝাঁড় থাকলে মশারা আপনাকে খুঁজে পাবে না। আর লেমন গ্রাস দেখতেও কিন্তু মন্দ নয়। এমনসব স্থানে এসব গাছের টব রাখুন যেখানে সকাল বিকাল কিংবা রাতে পরিবারের অন্যদের নিয়ে কিংবা বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা বা সময় কাটান। এভাবে থাকুন মশা মুক্ত।
২. প্রতিদিন নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো ধুনোর সঙ্গে ব্যবহার করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৩. ঘরের মধ্যে মশার উৎপাত কমাতে চাইলে, ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। ফলে হলুদ আলো হবে। দেখবেন মশা কমে গেছে, কারণ মশা হলুদ আলো থেকে দূরে থাকতে চায়।
৪. মাছি তাড়াতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করুন। ছোট গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫/৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলে। ৩ দিন অন্তর পানি বদলে দেবেন।
৫. ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। এইভাবে ঐ চা পাতা ধুনোর বদলে ব্যবহার করুন। শুকনো চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সমস্ত মশা, মাছি পালিয়ে যাবে।
৬. মশা তাড়াবার একটা সহজ উপায় হল, কয়েক টুকরো কর্পূর আধকাপ জলে ভিজিয়ে খাটের নীচে রেখে দিন। তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমান।
৭. কয়লা বা কাঠ-কয়লার আগুনে নিমপাতা পোড়ালে যে ধোঁয়া হবে তা মশা তাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকর।
৮.ক্যাটনিপ অয়েল,ক্যাটনিপ অয়েলের nepetalactone নামক পদার্থ মশা তাড়াতে DEET (Diethyle-Meta-toluamide) থেকে প্রায় ১০ গুন বেশি শক্তিশালী। ক্যাটনিপ অয়েল মাখালে মশারা ধারেকাছেও ঘেঁষবে না।
৯.বারান্দায় চামচিকার বাক্স রাখুন,ভয় পাওয়ার কিছু নেই। চামচিকারারা এক ঘন্টায় কয়েকশত পোকা-মাকড় খায়। তাই মশা তাড়াতে ব্যাট হাউস বানাতে পারেন। বারান্দায় কিংবা ভেন্টিলেটরের কাছে রাখুন আর চামচিকাদের কাজ করতে দিন।
১০.মোশা তাড়াতে ফ্যান এর ব্যবহার ।মশার থেকে ফ্যানের বাতাস অনেক বেশি হওয়াতে মশা ফ্যানের বাতাসের সাথে নিজেকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখতে পারেনা। এতে করে মশাকে ফ্যানের পাখা বিভিন্ন দিকে ছিটকে ফেলে। মশা এতে আপনার কানের কাছে খুব কম উপদ্রপ করতে পারে।
১১.মশাদের পছন্দের রঙের পোষাক এড়িয়ে চলুন।কি অবাক হচ্ছেন! হ্যাঁ কিছু কিছু প্রজাতির মশারা কয়েকটি গাঢ় রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয় যেমন কালো, নীল আর লাল। আর তারা গরমের প্রতিও সংবেদনশীল। তাই ঠান্ডা রাখুন ঘর আর পোষাক পড়ুন হালকা রঙের। সেই সাথে সম্ভব হলে মশাদের আক্রমন সময়ে সুগন্ধি পারফিউম কিংবা লোশন না ব্যবহার করাই ভাল।
১২.ঘরে এবং ঘরের বাইরে লাইটবাল্বগুলো পরিবর্তন করুন। মশারা সাধারনত সব লাইটের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এলইডি লাইট, হলুদ ‘বাগ লাইট’, বা সোডিয়াম লাইট এক্ষেত্রে উপকারী। এগুলো জ্বালালে সন্ধ্যাবেলা ঘরে বাইরে মশাদের আক্রমন অনেকটাই কমে যাবে।
আরও পড়ুনঃ কলারোয়ায় ক্লিনিকে প্রতারণা
১৩.রসুনের স্প্রে,হ্যাঁ! রসুনের স্প্রে মশা তাড়াতে খুবই কার্যকরী প্রাকৃতিক উপায়। পাঁচ ভাগ পানিতে এক ভাগ রসুনের রস মেশান। মিশ্রনটি একটি বোতলে ভরে শরীরের যেসব স্থানে মশারা কামড়াতে পারে সেসব স্থানে স্প্রে করুন। যেকোন ধরনের রক্ত চোষারা আপনার ধারেকাছেও আসবে না।
সুগন্ধির ব্যবহার
১৪.মশারা সুগন্ধি থেকে দূরে থাকে। সুতরাং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে আতর, সুগন্ধি, কিংবা লোসন মেখে শুতে পারেন। নিশ্চিত করে বলা যায় এতে মশা সাধারণ থেকে অনেক কম দেখা যাবে।
আরও দুটি টিপস –
*খেয়াল রাখুন যেন কোথাও জল জমে না থাকে।ঘরের আনাচে-কানাচে কিংবা উঠোনে জল জমে থাকলে সেখানে মশারা বংশবিস্তার করতে পারে। তাই যেখানেই জল জমুক না কেন, তা সরিয়ে ফেলুন। মশার বংশবিস্তার রোধ করুন।
*লোডশেডিং- এর সময় যদি হ্যারিকেন বা কাঁচ ঢাকা বাতিদান জ্বালান তবে তার ওপর দু-একটা ব্যবহৃত মশা মারার রিপেলেন্ট রেখে দেবেন। আলোর সঙ্গে সঙ্গে মশা তাড়ানোর কাজও হবে।