দেখে নিন পরীক্ষিত ডায়েট চার্ট, দ্রুত নয়, আস্তে আস্তে কমবে ওজন
অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ছিপছিপে গড়নের শরীর কে না চায়? কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না। তার জন্য চাই প্রচেষ্টা আর উদ্যোগ। আর আপনাদের সেই উদ্যোগ কে আর এক ধাপ এগিয়ে নিতেই আজকের এই ডায়েট চার্ট। আজকে আপনাদের জন্য এমন একটি ডায়েট চার্ট দেয়া হলো যার সাহায্যে মাসে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব এবং খুব সহজেই পরিমিত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ্য গতিতে এই ওজন কমানো সম্বব। আর সেই লক্ষ্যে পৌছাতে হলে প্রতিদিন আপনাকে অবশ্যই ১২৮০ ক্যালরি, তার মানে মাসে ৩৮,৪০০ ক্যালরি বার্ণ করতে হবে এবং ডায়েট চার্টে এমন সব খাবার থাকতে হবে যা মোটামুটি ১৫০০ ক্যালরির হতে হবে।
অতিরিক্ত ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
সকাল ৮:০০
– সেদ্ধ ডিম ১ টি সাদা অংশ (৫২ ক্যালরি)
– এক বাটি জাম্বুরা( জুস করে বা এমনি খেতে পারেন) (৯৬ ক্যালরি)
– ২ টি রুটি (২১০ ক্যালরি)
– ভেজিটেবল সুপ (১৫০ ক্যালরি)
সকাল ১১:০০
– এক কাপ গ্রিন টি চিনি ছাড়া (কোন ক্যালরি নেই)
– একটি আপেল (৮১ ক্যালরি) / একটি কমলা (৮৬ ক্যালরি)
দুপুর ২:০০
– ভাত ১ কাপ (২১৬ ক্যালরি) / ২ টি রুটি (২১০ ক্যালরি)
– ১ বাটি মিক্স্ড ভেজিটেবল (৮৫ ক্যালরি)
– ১ কাপ ডাল (২২০ ক্যালরি) / এক টুকরা মাছ (১৪২ ক্যালরি)
বিকেল ৫:০০
– এক কাপ গ্রিন টি (চিনি ছাড়া)
– ২ টি ক্রিম ছাড়া বিস্কিট (৩০ ক্যালরি)
সন্ধ্যা ৭:০০
– ডাবের পানি (৪৬ ক্যালরি)
অথবা ৮-১০ টি পেস্তা বাদাম (৭০ক্যালরি)
রাত ৮:৩০
– ভাত ১ কাপ (২১৬ ক্যালরি) / ২ টি রুটি (২১০ ক্যালরি)
– ১ কাপ সালাদ (৫০ ক্যালরি)
– ১ কাপ সবজি (৮৫ ক্যালরি) / আধা কাপ টক দই (৬৫ ক্যালরি)
এই হলো মোটামুটি ১৫০০ ক্যালরির একটি ডায়েট চার্ট। তবে এই ডায়েট চার্ট মেনে চলার পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়াম করা অত্যাবশ্যক। কারণ এর মাধ্যমে আপনি দেহের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ণ করতে পারবেন। যেকোনো ব্যায়াম ক্যালরি বার্ণ করতে সহায়ক। শুরুতে হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন। প্রতিদিন ৪৫ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করূন। এছাড়াও ফ্রি হ্যান্ড এক্সার্সাইজ় করতে পারেন।
এছাড়াও নীচের বিষয়গুলো অনুসরণ করলে ভালো ফল পাবেন:
প্রতিদিন সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের পূর্বে ২ গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করুন।
সকালে খালি পেটে এক টুকরা লেবু এবং আধা চা চমচ মধু হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
সবজির লিস্টে ব্রোকলি, লেটুস, পালং শাক এবং অন্যন্য সবুজ সবজি রাখার চেষ্টা করুন।
রেগুলার সালাদের সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এটি ক্যালরি বার্ণ করতে খুবই উপকারী।
রাতের খাবার ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে খেয়ে ফেলুন।
তাজা ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি হলো কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, তাই যাঁদের ওজন বেশি তাঁদের বেশি করে এগুলো খাওয়া উচিত।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। কারণ, লবণ শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
দুধযুক্ত খাবার, যেমন: পনির, মাখন—এগুলো পরিহার করতে হবে। কারণ, এগুলো উচ্চ চর্বিযুক্ত। সঙ্গে মাংস ও আমিষজাতীয় খাবারও নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।
উচ্চ শর্করাসমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন—চাল, আলু অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে হবে, আর গম (আটা) খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
তিক্ত স্বাদযুক্ত সবজি ও করলা খুবই কার্যকর বাড়তি ওজন কমানোর জন্য।
মসলাজাতীয় খাবার, যেমন: আদা, দারচিনি, কালো মরিচ—এগুলো প্রতিদিনের খাবারে রাখতে হবে। মসলাজাতীয় খাবার হলো ওজন কমানোর কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওজন কমানোর আরেকটি ভালো উপায় হলো মধু খাওয়া। মধু দেহের অতিরিক্ত জমানো চর্বিকে রক্ত চলাচলে পাঠিয়ে শক্তি উৎপাদন করে, যা ব্যবহূত হয় দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপে। মধু খাওয়া প্রথমে শুরু করতে পারেন অল্প পরিমাণে, যেমন—এক চামচ বা ১০০ গ্রাম, যা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে এর সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস দিয়ে খেতে পারেন।
যাঁরা পথ্য নিয়ন্ত্রণের নিয়ম মেনে চলেন বা দিনের পর দিন উপবাস করেন ওজন কমানোর জন্য, তাঁদের জন্য মধু ও লেবুর রস খুবই উপকারী। এটি কোনো ধরনের শক্তি ও ক্ষুধা নষ্ট না করে। এ ধরনের চিকিৎসায় এক চামচ টাটকা মধুর সঙ্গে আধা চামচ কাঁচা লেবুর রস আধা গ্লাস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার খেতে হবে।
বাঁধাকপিকে ওজন কমানোর আরেকটি কার্যকর উপায় হিসেবে ধরা হয়। বাঁধাকপি মিষ্টি ও শর্করাজাতীয় খাবারকে চর্বিতে রূপান্তর করতে বাধা দেয়। এ জন্য বাঁধাকপি খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে ওজন কমাতে। এটিকে কাঁচা অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়।
শারীরিক ব্যায়াম হলো ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। ব্যায়াম শরীরের জমাকৃত ক্যালরি ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা চর্বি হিসেবে জমা থাকে। তা ছাড়া ব্যায়াম পেশির টান কমায় এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। ব্যায়াম শুরু করতে পারেন হাঁটাচলা করে, যা আস্তে আস্তে দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ও অন্যান্য শারীরিক কসরত করে নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতে পারেন।
পাশাপাশি পথ্য নিয়ন্ত্রণের এ নিয়ম মেনে চলতে পারেন। পরিমাণমতো ভাগ করে প্রতিদিন খাবার খাবেন এবং অবশ্যই যেন প্রতিটি ভাগ অল্প পরিমাণে হয়। প্রতিটি ভাগে যে পরিমাণ ভাত থাকবে, তা যেন কোনোভাবেই এক মুঠের বেশি না হয়। নিয়মিতভাবে ছোট ছোট ভাগে (চার-পাঁচ ঘণ্টা অন্তর) খাবার খেলে আপনার খাবার পরিপাক ও রাসায়নিক রূপান্তর বাড়বে, যা দেহে চর্বির জমাট বাঁধায় বাধা দেবে। সঙ্গে অবশ্যই ব্যায়াম চালিয়ে যাবেন আপনার বর্ধিত ওজন কমাতে।
আশা করি পোস্টটি দ্বারা আপনারা উপকৃত হবেন।
সতর্কতাঃ দ্রুত ওজন কমানোর চেয়ে আস্তে আস্তে ওজন কমানো ভাল।