পাকা চুল কালো করার ঘরোয়া বিশেষ উপায়
বয়স বাড়ার সাথে আমাদের চুলের রঙ সাদা হতে থাকে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু অনেকেই আছেন যাদের চুল খুব কম বয়সেই সাদা হতে শুরু করে। সাধারণত আমাদের চুলে যে রঞ্জন পদার্থ থাকে সেটি আমাদের চুল কালো করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে রঞ্জন পদার্থটি কমতে থাকে। ফলত চুল সাদা হয়ে যায়। তবে বর্তমানে পারিপার্শিক পরিবেশ এবং শারীরিক সমস্যা এই দুটি কারণেই কম বয়সে অনেকেরই চুল সাদা হয়ে যায়।
আমাদের শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর অভাব হলে বা থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এর অসমক্ষরণ অকালেই আমাদের চুল সাদা করে দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত স্ট্রেস, অতিরিক্ত ধুম্রপান, হেরিডিটি, এনিমিয়া, অপুষ্টি ইত্যাদি কারণে অকালেই আমাদের চুল সাদা হয়ে যাওয়ার সমস্যাটি হয়।
সাদা চুল কালো
সাদা চুলের রং পরিবর্তন করার জন্য বাজারে নানা রকমের হেয়ার কালার পাওয়া যায়। যেগুলি অনেক সহজেই সাদা চুল আড়াল করে দিতে পারে। তবে এতে মিশ্রিত রাসায়নিক অনেক সময় আমাদের চুল রুক্ষ করে তলে এবং এর ফলে চুল পরতে শুরু করে। তাই আজ থাকছে ঘরোয়া উপায়ে, কোনো রকম চুলের ক্ষতি না করে, চুল কালো করার উপায়।
হেনা
ঘরোয়া উপায়ে সাদা চুল কালো করার সবথেকে ভালো উপায় হলো হেনা। হেনার সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক রং। এতে চুলের কোনরকম ক্ষতির সম্ভাবনা থাকেনা। এটি খুব সহজেই পাকা চুলকে আড়াল করে। হেনা পাউডার আগের দিন রাতে অল্প কফির সাথে গরম জলে ভিজিয়ে পেস্ট মত বানিয়ে রাখুন। সকালে এর সাথে দই, ১ চামচ ভিনিগার ও ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে চুলে লাগিয়ে ১-২ ঘন্টা পর ভালো করে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এরপর মাথায় অল্প তেল মেখে পরের দিন শ্যাম্পু করে নিন। চুলের রং দীর্ঘস্থায়ী হবে।
চা পাতা
চা পাতা সাদা চুল কালো করে খুব সহজেই। ২-৩ বড় চামচ চা পাতা জলে ফুটিয়ে নিন। এবার ছাকনি দিয়ে চা পাতা ও চায়ের জল আলাদা করে নিন। ঠান্ডা হলে চা পাতা ফোটানো জল চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ২ ঘন্টা পর ঠান্ডা জল দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু না করাই ভালো। এটি আপনি সপ্তাহে দু থেকে তিন বার চুলে লাগাতে পারেন ভালো ফল পাওয়ার জন্য।
নারকেল তেল ও লেবু
নারকেল তেল ও লেবুর রস চুলে লাগালে আমাদের চুলের অকালেই সাদা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে এর ফলে আমাদের চুল ঘন ও কালো হয়। নারকেল তেলের সাথে একটি লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে ভালো করে চুল ও স্কাল্প এ ম্যাসাজ করুন। এবার ১-২ পর ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার তেল ও লেবুর রস চুলে লাগালে চুলের অকালেই সাদা হওয়াকে আটকানো যায় এবং চুলের স্বাভাবিক কালো রং অনেকে দিন বজায় থাকে।
আমলকি ও হেনা
আমলকি আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত ভালো। চুল ভালো করার জন্য যে সমস্ত হারবাল অসুধ ব্যবহার করা হয় তার বেশির ভাগেরই একটি প্রধান উপাদান হলো আমলকি। ঘরোয়া উপায়ে চুল কালো করার জন্য আমলকি ও হেনার এই হেয়ার প্যাকটি অত্যন্ত কার্যকরী। হেনা পাউডার গরম জলে ভিজিয়ে পেস্ট মত বানিয়ে নিন। এবার এর সাথে আমলকি পাউডার ও অল্প কফি মিশিয়ে মিশ্রণটি ভালো করে চুলে লাগিয়ে ১ থেকে ১.১/২ ঘন্টা পর চুল ভালো করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন।
কারিপাতা জবাফুল ও নারকেল তেল
জবা ফুল ও কারিপাতা দুটি ভিটামিন পুষ্ট যা আমাদের চুলের জন্য উপকারী। এটি আমাদের চুলের স্বাভাবিক কালো রংকে সাদা হতে দেয়না বিশেষ করে যাদের চুল খুব অল্প বয়সেই সাদা হয়ে যায় তাদের জন্য এই হেয়ার প্যাকটি খুব ভালো। কয়েকটি জবা ফুলেরপাপড়ি ও কারিপাতা নারকেল তেলে সেদ্ধ করে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ছেকে নিন। তেলটি মাথার স্কালপে ভালো করে মালিশ করুন। ৪০-৪৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এই তেলের নিয়মিত ব্যবহার মাথার আমাদের চুলকে সাদা হওয়া থেকে রক্ষা করে ও চুল ঘন কালো উজ্জল করে তোলে।
মেথি ও নারকেল তেল
মেথিতে বর্তমান অ্যামিনো অ্যাসিড, ও লিকিথিন আমাদের চুল সাদা হওয়াকে কমিয়ে দিতে সক্ষম। এছাড়া নারকেল তেলে ভিটামিন, মিনারেলস আমাদের চুলের সদা হওয়াকে আটকাতে সক্ষম। নারকেল তেল গরম করে তাতে মেথি দানা দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার উষ্ণ গরম অবস্থায় মেথি ছেঁকে নিয়ে স্কাল্প ও চুলের গোঁড়ায় ভালো করে মালিশ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে মালিশ করে পরদিন সকালে উঠে শ্যাম্পু করে নিলে সব থেকে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
পেয়াজ
মাথায় পেয়াজের ব্যবহার আমাদের চুলকে অনেক বয়স পর্যন্ত কালো রাখতে সক্ষম। একট মাঝারি মাপের পেয়াজ খোসা ছাড়িয়ে মিক্সিতে ২-৩ মিনিট মত বেটে রস বানিয়ে নিন। এবার একটি নরম কাপড়ে এই পেস্টটি ছেঁকে নিন। এবার এই ছেকে নেওয়া অংশটি মাথায় ভালো করে মেখে ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। এগুলি প্রত্যেকটি সুরক্ষিত ঘরোয়া উপায় পাকা চুল কালো করার। তবে অনেক সময় অনেক গুরুতর রোগের কারনেও মাথার চুল সাদা হয়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে এটি অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ্র নেওয়া উচিত। এছাড়া সময় মত ও ঠিকমত ঘুম, নিয়মিত শাকসব্জি খাওয়া, ধুমপানের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া ইত্যাদি আমাদের চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং অকাল পক্কতার সমস্যাটি থেকে রক্ষা করে।