24 Live Bangla News

চুল পড়া বন্ধে ঘরে তৈরি হারবাল হেয়ার অয়েল রেসিপি

আমি যেহেতু বাজারে পাওয়া কেমিক্যালে ভরপুর স্কিন এবং হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টসে এত কম বিশ্বাস করি যে আমার দরকারি ম্যাক্সিমাম প্রোডাক্ট নিজেরই ঘরে তৈরি করে নেয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে। এর আগেও আপনাদের সাথে আমার ঘরে তৈরি শ্যাম্পুর রেসিপি শেয়ার করেছিলাম। আজ শেয়ার করব আমার চুল পড়া বন্ধ করার তেলের রেসিপি।

আমি অনেক ট্রায়াল অ্যান্ড এররের মাধ্যমে আমার নিজের উপযোগী করে এই তেলটা অবশেষে ঠিক ভাবে তৈরি করতে পেরেছি। সাধারণত আমি ৫০০ মিলি করে প্রতিবার তৈরি করি, যাতে অল্প দিনে শেষ হয়। হারবাল অয়েল অনেক বেশি দিন রেখে ব্যবহার করা ঠিক না।

এবার তেল শেষ হবার পর আবার যখন নতুন করে তৈরি করতে গেলাম তখন আর্টিকেল লেখার জন্য ছবিও তুলে ফেললাম। যাতে করে আপনারা পুরো procedure টা বুঝতে পারেন। চলুন প্রথমে দেখে নিই আমার অ্যান্টি হেয়ার ফল হারবাল অয়েল তৈরি করতে কী কী লাগছে-

উপাদান
খাঁটি ভার্জিন কোকোনাট অয়েল (ঘানিভাঙ্গা নারিকেল তেল)
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
(বাজারের ম্যাক্সিমাম চুলে ব্যবহার করার অলিভ অয়েলে মিনারেল অয়েল থাকে, ওগুলো ব্যবহার করবেন না)

ঘানি ভাঙ্গা ক্যাস্টর অয়েল
(আমি বাইরে থেকে আনিয়ে নেই, বাংলাদেশে ভালো মানের ক্যাস্টর অয়েল পাই নি। ক্যাস্টর অয়েল চুলের আর স্ক্যাল্পের ইনফেকশন দূর করে এবং চুল সাইনি আর সিল্কি করে)

ভিটামিন ই অয়েল
(এটা ফার্মেসিতে পাবেন)

অ্যাভোকাডো অয়েল
(এটাও অর্ডার দিয়ে বাইরে থেকে আনিয়ে নেই)

জোজোবা অয়েল
(ফার্মেসিতে পেতে পারেন, না পেলে অর্ডার করে আনিয়ে নিতে হবে। জোজোবা অয়েলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আছে যা চুল আর ত্বকের জন্য খুবই ভালো)

কাঠবাদামের তেল (almond oil)
রোজমেরি এসেনসিয়াল অয়েল
মেথি
(একটু পিষে দানা গুলো ভেঙ্গে নেবেন। মেথি চুল পড়া বন্ধ করে আর চুলের খুশকি দূর করে।)

কারি পাতা
(কাঁচা বাজারে অথবা সুপারশপে খোঁজ করলে পেয়ে যাবেন। কারিপাতা চুলের রঙ সুন্দর রাখে আর অকালে চুল পাকতে দেয় না। চুল পড়া রোধেও এর ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত)

কালোজিরা
(কালোজিরার দানা গুলোও একটু ভেঙে নেবেন। কালোজিরা চুল পড়া বন্ধ করে আর মাথায় নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে)

আচ্ছা, উপকরণতো দেখিয়ে দিলাম। এবার দেখুন কীভাবে তেলটা বানাবেন-

প্রথমে একটা মেটাল পাত্রে মেথি আর কালোজিরার ভাঙ্গা দানা নিয়ে নিন।
এবার এতে ভিটামিন ই তেল, রোজমেরি এসেনসিয়াল অয়েল, জোজোবা অয়েল আর almond oil ছাড়া সব তেল মিশিয়ে নিন। কতটুকু তেল তৈরি করবেন তা বুঝে তেল ঢালুন। আমি সব তেল সমান পরিমাণে দেই। কোন কম বেশি করি না।
এবার খুব অল্প আঁচে তেলের মিশ্রণটা গরম করুন। ১০-১২ মিনিট পরে পাত্রে কারি পাতা অ্যাড করুন।
এরপর আবার অল্প আঁচে তেল গরম করতে থাকুন। খেয়াল রাখুন, যখন তেল উপরের ছবির মতন ফেনা তুলবে তখনি চুলা থেকে তেল নামিয়ে নিন। বেশিক্ষণ রাখলে বা চুলার আঁচ বেশি হলে সব উপকরণ পুড়ে গিয়ে তেল নষ্ট হয়ে যাবে।
তেল চুলা থেকে নিচে নামিয়ে পুরো ঠাণ্ডা করে নিন। এরপর একদম ঠাণ্ডা তেলে একে একে
ভিটামিন ই তেল, জোজোবা অয়েল আর almond oil আগের পরিমাণে মিশিয়ে নিন। এরপর রোজমেরি এসেনসিয়াল অয়েল দিন, খুবি অল্প পরিমাণে বাকি সব তেলের পরিমাণের তিন ভাগের একভাগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, তেল গরম থাকলে কিন্তু এসব তেলের গুণাগুন নষ্ট হয়ে যাবে।

এবার তেলটা না ছেঁকে সব কিছু সহ একটা কাঁচের বোতলে বা বয়ামে ভরে সংরক্ষণ করুন।
এই তেলটা ৬ মাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু মনে করে প্রতি মাসে একটু কড়া রোদে দিতে হবে। একবারে অনেকখানি করে বানাবেন না। যতটুকু শেষ করতে পারবেন ততটাই একবারে বানান।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
ছোট পাত্রে আপনার চুলের পরিমাণ বুঝে তেল নিয়ে হালকা গরম করুন।
৫-১০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করে করে পুরো মাথায় আর চুলে তেল লাগান।
তেল দেয়া শেষে একটা টাওয়াল গরম পানিতে চুবিয়ে মাথায় পেঁচিয়ে ১০ মিনিট রাখুন।
তেলটা চুলে ৫-৬ ঘণ্টা বা সারারাত রাখুন। পরের দিন ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এই তেলটা বেশ ভারী হবে কারণ এতে ক্যাস্টর অয়েল আর অনেকটা ভিটামিন ই অয়েল আছে। ধৈর্য ধরে শ্যাম্পু করতে হবে।
সপ্তাহে অন্তত ২ বার মাথায় তেল দিন।
আমি এই তেলটা তৈরি করে ব্যবহার শুরু করার পর খুবই ভালো ফল পাচ্ছি। আশা করি ধৈর্য ধরে রেগুলার ব্যবহার করলে আপনারাও খুব কম সময়ে চুল পড়া আর চুলের খুশকির হাত থেকে মুক্তি পাবেন।

Read More Bangla News