কালো বিড়াল রাস্তা কাটলে কি হয়
যুগ যুগ ধরে মেনে আসছে সবাই যে কালো বিড়াল একেবারেই শুভ নয়। তাই তো ভূতের সিনেমা হোক কী আম বাঙালির জীবন, সবেতেই কালো বিড়ালকে ভয়ের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু এমনটা করার পিছনে কি আদৌ কোনও যুক্তি আছে, নাকি সবটাই অন্ধবিশ্বাস? নিজের ক্ষতি কে চায় বলুন! তাই কেউই কালো যে বিড়াল পোষার সাহস দেখাবেন না, সে কথা জানা আছে। তাই তো এই প্রবন্ধে কালো বিড়াল বিষয়ক নানা ধরণার উপর আলোকপাত করে দেখার চেষ্টা করা হল, সলিয়ে দেখার চেষ্টা করা হল এই সব বিশ্বাস আদৌ সত্যি কিনা! সেই সঙ্গে কালো বিড়াল রাস্তা কাটলে জান-মালের কোনও ক্ষতি হতে পারে কিনা, সে বিষয়েও জানার চেষ্টা করা হল। কালো বিড়াল কি অশুভ? সুন্দর, মখমলে লোমে ঢাকা এই প্রাণীটির পোষ্য হিসেবে যতই কদর থাকুন না কেন, একথা কম-বেশি সবাই বিশ্বাস করেন যে বিড়াল, বিশেষত কালো বিড়াল রাস্তা কাটা একেবারেই শুভ লক্ষণ নয়। তবে ভাববেন না যে কেবলমাত্র আমাদের দেশেই এমন বিশ্বাসের চল রয়েছে। প্রাচীন নথি ঘেঁটে জানতে পারা যায় একাধিক ইউরোপিয়ান কান্ট্রি এবং পশ্চিমি দেশেও এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে কালো বিড়ালের রাস্তা কাটা শুধু অসুভ নয়, খুব খুব অশুভ।
কোনও কোনও জায়গায় তো এমনটাও বিশ্বাস করা হয় যে কালো বিড়াল রাস্তা কাটার অর্থ হল কোনও অশুভ শক্তি আপনাকে স্বর্গলাভের পথে বাঁধা দিচ্ছে। এবার বুঝেছেন তো বিড়ালকে ভয় করার পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে এবং সেইসব কারণগুলিকে সময়ে সময়ে ধোঁয়া দিয়েছে আমাদের ধর্মও। বিড়াল যে অশুভ এই ধরণার জন্ম হল কীভাবে? এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর জানা না গেলেও একাধিক প্রাচীন নথি ঘেঁটে যেটুকু জানতে পারা গেছে, তা হল বিড়ালের সঙ্গে অশুভ শক্তির যে একটা যোগ রয়েছে এই ধারণার জন্ম হয় প্রথম মিশরে। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন খারাপ সময় যেমন চুপিসারে আমাদের উপর হমলা চালায়, ঠিক তেমনি এই প্রাণীটিও ধীর লয়ে এদিক-সেদিক যাতায়াত করে। তাই তো বিড়ালকে নিয়ে নেতিবাচক সব ধারণার জন্ম হতে সময় লাগেনি। এখানেই শেষ নয়, খ্রিষ্টান ধর্মেও কালো বিড়ালকে শুধু অশুভ শক্তি হিসেবে নয়, আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে ডাইনিদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় এমনটাও বলা হয়েছে যে বিড়ালদের মধ্যে খারাপ শক্তি বাস করে, যা যে কোনও যে কোনও ধরনের ক্ষতি সাধণ করতে পারে। ভিন্ন ধরাণাও রয়েছে: ভারতের মতো বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বিড়ালকে যেমন অশুভ হিসেবে গণ্য করা হয়, ঠিক তেমনি বেশ কিছু অঞ্চলে এই প্রাণীটিকে শুভ শক্তির প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত করা হয়ে থাকে। যেমন স্কটল্যান্ডের কথাই ধরুন না। স্কটিশরা বিশ্বাস করেন বাড়ির বারান্দায় যদি কালো বিড়াল এসে বসে, তাহলে তা বেজায় শুভ। শুধু তাই নয়, এমনটা হওয়ার অর্থ সেই পরিবার সমৃদ্ধ এবং সুখে ভরে উঠবে। দেখুন কেমন উল্টো মতও আছে কালো বিড়ালকে নিয়ে! সাদা বিড়ালের কাহিনি: আমেরিকানরা বিশ্বাস করেন সাদা বিড়ালের স্বপ্ন দেখা খুব শুভ।
কারণ এমনটা হওয়া সমৃদ্ধির প্রতীক। তবে ভিন্ন মতেরও সন্ধান পাওয়া যায় ট্রাম্পের দেশে। কী সেই মত? কেউ কেউ বিশ্বাস করেন সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় যদি সাদা বিড়াল চোখে পরে, তাহলে তা মোটেও শুভ ঘটনা নয়। কারণ দিনের এই বিশেষ সময়ে সাদা বিড়াল সমনে আসার অর্থ হল খারাপ সময় আসতে চলেছে। বিশ্বাসের মধ্যেকার লড়াই: তাহলে শেষমেষ কী দাঁড়াল, কালো বা যে কোনও বিড়াল রাস্তা কাটলে তাকি বাস্তবিকই অশুভ? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বেজায় কষ্টকর। কারণ ভারত, আমেরিকা এবং ইউরোপের কোনও কোনও দেশে যেখানে বিশ্বাস করা হয় কালো বিড়ালের রাস্তা কাটা বেজায় অশুভের লক্ষণ, সেখানে জাপানে একেবারে উল্টো ধারণা রয়েছে। জাপানীরা বিশ্বাস করেন কালো বিড়ার রাস্তা কাটা বেজায় শুভ। তাই এবার থেকে কোনও বিড়াল, তা কালো হোক কী অন্য কোনও রঙের, রাস্তা কাটলেই মনে মনে বারে বারে "কনিচিউয়া" বলবেন। এই শব্দটির অর্থ গুড লাক। দেখবেন কোনও খারাপ কিছুই ঘটবে না।