বিয়ে নিয়ে মুখ খুললেন ‘রানি রাসমণি’র শাশুড়ি
পরিচিতি আসে ‘এক আকাশের নীচে’র টুসকি চরিত্রের মাধ্যমে। তিনি সমতা দাস। এখন জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘রানি রাসমণি’তে রানির শাশুড়ির চরিত্রে অভিনয় করছেন। এতদিনের অভিনয়ের জার্নি নিয়ে মুখোমুখি আড্ডা দিলেন সমতা। কখনও মনখারাপ, কখনও ভাল লাগা, কখনও বা অভিমান— নানা শেড ধরা পড়ল সমতার মুখে। আপনার বয়স কত যেন? সমতা: বয়স, কেন? (নায়িকা-সুলভ চাহনি) না মানে, আপনার ছেলের বয়স ওই ২৩-২৪ তো। তাই আরকি সমতা: হা হা হা…। ঠিকই বলেছেন। ‘রানি রাসমণি’তে আমার ওই বয়সের ছেলেকেই দেখানো হচ্ছে। গল্পটা যেমন দেখানো হচ্ছে, তখনকার দিনে মেয়েদের ৯-১০ বছরে বিয়ে দেওয়া হত।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেক ডিফারেন্সও দেখানো হত। সেই হিসেবে ছেলের বয়স ২৩-২৪। আমি ইন্ডাস্ট্রিতে খুব ছোট থেকে কাজ করছি। ফলে আমার বয়স ৩০, সেটা অনেকেই জানেন। কিন্তু রিল আর রিয়েল তো কখনও মেলে না। ঠিকই। কিন্তু ৩০ বছরে ‘রিল’-এ শাশুড়ির চরিত্রতেও কিন্তু অনেকে রাজি হন না। সমতা: এটাও ঠিক। যখন প্রথম অফার এল, অ্যাকসেপ্ট করব কিনা সেটা নিয়ে কনফিউশন ছিল। এত বড় ছেলের মা এর আগে করিনি। ছোট বাচ্চার মা করেছি। বাড়ির বউ বা বউদি থেকে হঠাত্ করে এত বড় ছেলের মা! আর একটা ফ্যাক্টরও ছিল। কী সেটা? সমতা: এখানে কেউ কোনও ক্যারেক্টারে ক্লিক করে গেলে সেই ধরনের অফারই আসতে থাকে। স্ট্যাম্প পড়ে যাওয়ার একটা সম্ভবনা থাকে। সেগুলো মাথায় কাজ করেছিল। তার পর রাজি হলেন কী ভেবে? সমতা: পরে যখন ব্রিফ করল, তখন লোভ হল। ভাবলাম এটাতে অনেক কিছু করার আছে। এই মহিলা, রানি রাসমণির শাশুড়ি কোথাও রাশভারী, কোথাও তার মধ্যে অদ্ভুত মমতা রয়েছে। কখনও মহিলা দুঃখী, কারণ তার প্রথম সন্তান মারা গিয়েছে। আবার জলি, সকলকে নিয়ে থাকতে ভালবাসে। অনেক শেডস আছে। সে জায়গা থেকে ভাবলাম দেখি না কী হয়। ফাইনালি কী দেখলেন? সমতা: রাসমণির ফিডব্যাক খুব ভাল। ফলে এখন মনে হয়, ঠিকই করেছি। আর এমনিতেও আমি খুব একটা চুজি নই। চরিত্র ভাল আর অভিনয়ের সুযোগ থাকলেই আমি রাজি। সমতা কি এখনও ‘এক আকাশের নীচে’র ‘টুসকি’কে মিস করে? সমতা: হুম। টুসকিকে একটু মিস করি। কারণ ‘এক আকাশের নীচে’র ওই চরিত্রটা করে আমি প্রথম চোখে পড়ি মানুষের। আমার কিন্তু প্রথম কাজ ক্লাস টু-তে। ‘জন্মভূমি’। আর মিস করার আরও একটা কারণ ‘এক আকাশের নীচে’র ওই টিমটা। টিম নয়, পরিবার ছিল। ওই অ্যাটাচমেন্টটা, ওই সময়টা মিস করি। সেই সময়টার পর হঠাত্ ইন্ডাস্ট্রি থেকে ভ্যানিশ হলেন কেন? সমতা: দেখুন হায়ার সেকেন্ডারির পর আমি বিয়ে করি। সে সময়টা কেরিয়ারে ফোকাস করিনি। বেশ কিছুদিন পরে কাজ শুরু করি আবার। সে জন্য কি কেরিয়ারে স্যাক্রিফাইজ করতে হয়েছে? সমতা: আমি তা মনে করি না। লোকে বলে আমার মধ্যে যা ট্যালেন্ট আমি আরও অনেক দূর এগোতে পারতাম। তবে আমি যেটুকু কাজ করেছি তাতে আমি স্যাটিসফায়েড। নায়িকা হওয়ার অফার আসেনি? সমতা: আমি একটু অন্যভাবে উত্তর দেব। সব কিছুরই তো একটা সময়ের ব্যাপার রয়েছে। ধরুন ১৫ থেকে ২৫— এমন একটা বয়স যা যে কোনও মেয়ের নায়িকা হওয়ার জন্য ঠিকঠাক সময়।
ওই সময়টা খুব ক্রুশিয়াল। সে সময়টা চুজ করে যদি কাজ নেওয়া যায় তা হলে ভাল হয়। আর আমার ওই বয়সটায় আমি কাজে সে ভাবে কনসেনট্রেট করিনি। খুব একটা ক্যালকুলেশন করে কাজ করিনি। সেটা ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল? সমতা: অনেকে বলে ভুল ছিল। তবে আমি সেটা মনে করি না। আমার কেরিয়ারের জন্য হয়তো ঠিক হয়নি। কিন্তু আমার নিজের জন্য সে সময়ে বিয়েটা খুব দরকার ছিল। বিয়েটা না হলে হয়তো জীবনটা আরও ঘেঁটে যেতে পারত। হয়তো কেরিয়ারে আরও কিছু কাজ হত। কিন্তু জীবনে আমি আনহ্যাপি হতাম। এটা তো মানবেন, কোথাও মানসিক শান্তিরও দরকার আছে। আমি একটা ভাল পরিবার পেয়েছি। বিয়ের পর আরও ম্যাচিওর হয়েছি। সে দিক থেকে আমি খুব খুশি। শ্বশুরবাড়ি থেকেও আমার কাজ খুব অ্যাপ্রিসিয়েট করে। কিন্তু একটা ভুল আমি করেছিলাম। কী সেটা? সমতা: আমার বাড়ি খুব কনজারভেটিভ। তবুও আমি যে প্রেম করেছিলাম, সেটা বাড়িতে বলে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা না বলে, আমি পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। বাবা-মা দুঃখ পেয়েছিল। যদিও কিছুদিন পরেই সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এই বয়সে এসে মনে হয়, ওই পাগলামিটা ঠিক হয়নি। সে সময় সমালোচনা শুনে মন খারাপ হত? সমতা: বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই নায়িকার কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়া এই ধারণা নিয়ে আমি সমস্যায় পড়েছি। কিন্তু আমি যদি নিজেকে মেনটেন করতে পারি, তা হলে সমস্যা কোথায়। ওই সময় আমার সম্পর্কেও এমন মনে করত অনেকে। বলত, ও বিয়ে করে নিয়েছে আর মনে হয় না কাজ করবে, সে ভাবে চান্স পাবে। আমার মনে হত, বিয়ের সঙ্গে কাজের কী সম্পর্ক। আমি তো এখনও কাজটা সেই ডেডিকেশন দিয়েই করব। ভালবাসা না থাকলে এই প্রফেশনে টিকে থাকা মুশকিল। তবে যার ভাবনা যার কাছে। কিন্তু এটা নিয়ে খারাপ লাগা ছিল। তখন মনে হয়েছিল, আমি কাজ করে বুঝিয়ে দেব এটা ঠিক নয়। আপনার কেরিয়ারে তো সিরিয়ালের কাজই বেশি। সমতা: হ্যাঁ। তবে সিরিয়াল, সিনেমা, নাটক, যাত্রা সব জায়গাতেই কাজ করেছি। সব জায়গাতে কমফর্টবেলও। কিন্তু সিরিয়াল দিয়েই কেরিয়ার শুরু তো। এখান থেকেই পরিচিতিও তৈরি হয়েছে। ফলে কৃতজ্ঞতা বলুন, ভালবাসা বলুন, এখানে একটু বেশি।
নিজের সম্বন্ধে কোনও গসিপ শুনেছেন? সমতা: একটা সময় আমি শুনতাম আমি খুব অহঙ্কারী, কাউকে পাত্তা দিই না, কথা বলি না। অবজ্ঞা করি। কিন্তু এমন কোনও ঘটনা নয়। আসলে আমি খুব ইন্ট্রোভার্ট। আমি এমনিতেই শান্ত, কম কথা বলি। কথা শুনতে ভাল লাগে, বলতে নয়। কেরিয়ারের শুরুতে বয়সও কম ছিল। আর তাই এই গসিপটা শুনে চোখ ছলছল করত।