প্রথমেই জেনে নেই শুটকি কিভাবে তৈরি করা হয়। শুঁটকি মাছকে দুইটা ভিন্ন সংরক্ষণ প্রকিয়ায় তৈরি হয়, একটা রোদে শুকিয়ে অপরটি হল মাটির নিচে পুঁতে রেখে ব্যাকটেরিয়া ব্রিড করে। চ্যাপা শুঁটকি দ্বিতীয় ভাবে তৈরি হয়। তাই এটা পুরোপুরি শুঁটকি না হয়ে খানিকটা মাংসল থাকে যা বিকট দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।

এখন আপনাদের জন্য রয়েছে শুটকি মাছের ১২ পদের রেসিপি।

চ্যাপা রসুন ভুনা
==================


উপকরণ :
১. চ্যাপা শুঁটকি ৫০ গ্রাম, ২. রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, ৩. রসুন স্লাইস আধা কাপ, ৪. পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, ৫. মরিচ বাটা ২ টেবিল চামচ, ৬. হলুদ ভাটা ১ চা চামচ, ৭. ফিশসস ১ চা চামচ, ৮. লবণ স্বাদমতো, ৯. তেল ১/৩ কাপ, ১০. কাঁচা মরিচ ৪টি।

প্রণালি :
> শুঁটকি ভালো করে ধুয়ে বেটে নিন। কড়াইয়ে তেল দিয়ে গরম হলে পেঁয়াজ ও রসুন স্লাইস দিন। পেঁয়াজ ও রসুন নরম হলে হলুদ, মরিচ ও রসুন বাটা দিয়ে ভুনে নিন কোয়ার্টার কাপ পানি দিয়ে। মসলা ভুনাভুনা হলে শুঁটকি, লবণ ও ফিশসস দিয়ে ভুনতে থাকুন। স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিন। বেশি ঝাল খেতে চাইলে কাঁচা মরিচ চিরে দিন। ঝাল কম খেতে চাইলে আস্ত মরিচ দিন। তেল চকচকে হয়ে কড়াই থেকে আলগা হলে নামিয়ে নিন।

দোমাছা
============


উপকরণ :
১. ছুরি মাছের শুঁটকি ১ কাপ, ২. কোরাল চিংড়ি মাছ ১ কাপ, ৩. পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল চামচ, ৪. রসুনবাটা ১ চা-চামচ, ৫. গোটা রসুন কোয়া ৭-৮টি, ৬. পেঁয়াজবাটা ১ চা-চামচ, ৭. টমেটোকুচি ১ টেবিল চামচ, ৮. তেল ২ টেবিল চামচ, ৯. হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, ১০. মরিচগুঁড়া দেড় চা-চামচ, ১১. লবণ পরিমাণমতো, ১২. কাঁচা মরিচ ফালি ৫-৬টা, ১৩. ধনিয়াপাতাকুচি ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি :
> ছুরি মাছের শুঁটকি টুকরা করে গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। নরম হলে ভেতরের কাটা বেছে নিন। চিংড়ি মাছের মাথা ফেলে ধুয়ে রাখুন। অথবা কোরাল মাছ নিলে ছোট ছোট করে কেটে তেলে পেঁয়াজ অল্প ভেজে হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, রসুনবাটা, পেঁয়াজবাটা, লবণ ও টমেটোকুচি দিয়ে কষান। এবার শুঁটকি দিয়ে নাড়ুন। চিংড়ি অথবা কোরাল মাছের টুকরা ঢেলে কষান। অল্প পানি দিয়ে ঢেকে দিন। ১০ মিনিট পর কাঁচা মরিচ ও ধনিয়াপাতাকুচি দিয়ে নামিয়ে নিন।

লইট্টা ভুনা
==================


উপকরণ :
১. লইট্টা শুঁটকি ২০০ গ্রাম, ২. পেঁয়াজ কুচি ২৫০ গ্রাম, ৩. রসুন কুচি ১০০ গ্রাম, ৪. রসুন বাটা ১ চা চামচ, ৫. আদা বাটা আধা চা চামচ, ৬. হলুদ বাটা আধা চা চামচ, ৭. মরিচ বাটা আধা চা চামচ, ৮. কাঁচা মরিচ ফালি ৫টি, ৯. লবণ ১ চা চামচ, ১০. আস্ত জিরা আধা চা চামচ, ১১. পানি আধা কাপ, ১২. তেল আধা কাপ।

প্রণালি :
> আস্ত শুঁটকি আগুনে পুরপুর শব্দ হওয়া পর্যন্ত ছেঁকে নিন। এবার শুঁটকি ছোট ছোট টুকরা করে কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। চুলায় কড়াইয়ে তেল দিয়ে গরম হলে অর্ধেক পেঁয়াজ কুচি দিন। পেঁয়াজ বেরেস্তা হলে আস্ত জিরা দিন। জিরা ফুটে উঠলে শুঁটকি দিন। ভালো করে নেড়ে সব বাটা মসলা দিন। রেখে দেওয়া পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি ও লবণ দিয়ে কষিয়ে পানি দিয়ে ঢেকে আঁচ কমিয়ে দিন। ঢেকে দেওয়া শুঁটকি সিদ্ধ হয়ে মাখামাখা হলে কাঁচা মরিচ ফালি দিয়ে নেড়ে আবারও ঢেকে দিন। ভুনাভুনা হলে নামিয়ে ফেলুন।

শুঁটকি পাতুরি
==================


উপকরণ :
১. চ্যাপা শুঁটকি ৫০ গ্রাম, ২. আলু কুচি ২ কাপ, ৩. পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, ৪. রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, ৫. মরিচ বাটা ৩ টেবিল চামচ, ৬. হলুদ বাটা ১ চা চামচ, ৭. আদা বাটা আধা টেবিল চামচ, ৮. ধনিয়াপাতা কুচি আধা কাপ, ৯. ফিশসস ১ টেবিল চামচ, ১০. তেল আধা কাপ, ১১. লবণ ১ চা চামচ, ১২. লাউ বা কুমড়াপাতা ১৫টি।

প্রণালি :
> শুঁটকি ধুয়ে বেটে নিতে হবে। কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি নরম করে ভেজে ধনিয়াপাতা ও লাউপাতা ছাড়া সব উপকরণ দিয়ে ভুনে নিন। এবার ধনেপাতা দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন। ঠাণ্ডা করুন। পাতার মধ্যে পরিমাণমতো শুঁটকির পুর দিয়ে মুড়ে টুথপিক দিয়ে আটকে দিন। ফ্রাইপ্যানে অল্প তেল দিয়ে গরম হলে ভেজে নিন। ২ পিঠ ভালোভাবে ভাজুন।

চ্যাপা ভর্তা
===================


উপকরণ :
১. চ্যাপাশুটকি ২০ গ্রাম, ২. শুকনা মরিচ ১৫টি, ৩. পেঁয়াজ টুকর ১ কাপ, ৪. রসুন কোয়া আধা কাপ, ৫. লবণ স্বাদমত, ৬. লাউপাতা ২টি।

প্রণালি :
> শুটকি পরিষ্কার করে ধুয়ে পাতা দিয়ে মুড়ে ফ্রাইপ্যানে সামান্য তেল দিয়ে ভেজে নিন সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত। ভাজার পর উপরের পাতাটি ফেলে দিন। রসুন কোয়া ভালভাবে টেলে নিন। পেঁয়াজও টেলে নিন যেন কচকচে ভাব থাকে। শিলপাটা শুকনা মরিচ বেটে নিন। এবার শুটকি, লবণ ও রসুন দিয়ে বাটুন। সবশেষে পেঁয়াজ দিয়ে আধাবাটা করে এক সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে লতি
=========================


উপকরণ :
১. মাথা ছাড়ানো চিংড়ির শুঁটকি আধা কাপ, ২. কচুরলতি ৫০০ গ্রাম, ৩. রসুনবাটা দেড় চা-চামচ, ৪. পেঁয়াজকুচি ৯ টেবিল চামচ, ৫. তেল ১ টেবিল চামচ, ৬. লবণ স্বাদমতো,
৭. হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, ৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, ৯. ধনিয়াপাতাকুচি ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি :
> চিংড়ি শুঁটকির মাথা ফেলে ধুয়ে রাখুন। কচুরলতির আঁশ ফেলে টুকরা করে নিন। তেলে পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচগুঁড়া ও চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে দিন। লতি সেদ্ধ হলে ধনিয়াপাতা, মরিচ দিয়ে নামিয়ে নিন।

চ্যাপা শুঁটকি ভুনা
=========================


উপকরণ :
১. চ্যাপা শুঁটকি ৪টা, ২. রসুনকুচি আধা কাপ, ৩. তেল ১ টেবিল চামচ, ৪. পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, ৫. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, ৬. হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, ৭. ধনিয়াগুঁড়া আধা চা-চামচ, ৮. লবণ স্বাদমতো, ৯. কাঁচামরিচ ২-৩টি।

প্রণালি :
> চ্যাপা শুঁটকি কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া ও শুঁটকি দিয়ে কষান। সামান্য পানি ও লবণ দিয়ে ঢেকে দিন। তেল ওপরে উঠে এলে কাঁচামরিচ ফালি দিয়ে নামিয়ে নিন।

লইট্টা ভর্তা
=====================


উপকরণ :
১. লইট্টা শুটকির টুকরা ১ কাপ, ২. কাঁচা মরিচ ১২টা, ৩. রসুন কোয়া ৭টি পেঁয়াজ টুকরা ১ কাপ, ৪. ধনিয়াপাতা আধা কাপ, ৫. লবণ ১চা চামচ, ৬. ফিশসস আধা চা চামচ।

প্রণালি :
> শুটকিগুলো মচমচে করে টেলে ভালভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। কাঁচা মরিচ, রসুন কোয়া ও ধনে পাতা ভালভাবে টেলে নিন। পেঁয়াজ ও আলাদাভাবে টেলে নিন তবে পেঁয়াজ কচকচে থাকবে। শুটকি, রসুন, কাঁচা মরিচ, ধনিয়াপাতা লবণ, ফিশসস সব এক সাথে বাটুন। সবশেষে এগুলোর সাথে পেয়াজ আধা বাটা করে বাটুন। সব যেন ভালভাবে মিশে যায়।

লইট্টা-শুটকির ভর্তা
======================


উপকরণ :
১. লইট্টা-শুটকি (ধুয়ে কুচি করে নেওয়া) আধা কাপ, ২. যে কোনো মাছ (সামান্য লবণ দিয়ে ভেজে কাটা বেছে নিতে হবে) ১ কাপ, ৩. আলু (মোটা কুচি করে কাটা) আধা কাপ, ৪. কাঁচামরিচ ১৫/১৬টি, ৫. পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, ৬. ধনিয়াপাতা-কুচি আধা কাপ, ৭. তেঁতুলের ক্বাথ ২ টেবিল-চামচ, ৮. লবণ স্বাদমতো, ৯. সরিষার তেল ৪ টেবিল-চামচ।

প্রণালি :
> প্রথমে তাওয়ায় শুটকি, আলু, কাঁচামরিচ একসঙ্গে টেলে নিন। আলু সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত টালতে হবে।
> তারপর টালা উপকরণগুলোর সঙ্গে তেঁতুলের ক্বাথ, লবণ ও মাছ দিয়ে মিহি করে বেটে নিন। তারপর পেঁয়াজ, ধনিয়াপাতা-কুচি ও তেল ভর্তার সঙ্গে হাতে কচলে মেখে মাছের আকার দিয়ে পরিবেশন করুন।

লইট্টা শুটকি ভুনা
===========================


উপকরণ :
১. লইট্টা শুটকি দেড় কাপ( ছোট ছোট টুকরা করা), ২. পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, ৩. রসুনকুচি আস্ত ৪টি, ৪. কাঁচামরিচ ফালি ৬/৭টি, ৫. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, ৬. মরিচ ও ধনিয়াগুঁড়া দেড় চা-চামচ করে, ৭. জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, ৮. আদাবাটা ১ চা-চামচ, ৯. আস্ত জিরা ১ চা-চামচ, ১০. তেজপাতা ১টি, ১১. কাঁচামরিচ ৫,৬টি, ১২. তেল ১/৪ কাপ,
১৩. লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি :
> লইট্টা শুটকি শুকনা তাওয়ায় টেলে আধা ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে বেশ ভালো করে ধুয়ে নিন। বেশ কয়েকবার পানি পরিবর্তন করে ধুতে হবে যেন শুটকিতে কোনো বালি না থাকে।
> প্যানে তেল গরম করে জিরা ও তেজপাতা ফোঁড়ন দিয়ে অল্প একটু পেঁয়াজ, রসুনকুচি ও কাঁচামরিচ ফালি দিন। কিছুক্ষণ পেঁয়াজ-রসুন ভেজে অল্প পানি দিয়ে গুঁড়া ও বাটামসলা কষিয়ে নিন।

> তারপর শুটকি দিয়ে আবার ভালো মতো কষিয়ে অল্প পানি দিন। পানি কিছুটা কমে আসলে বাকি পেঁয়াজ-রসুন দিয়ে মিশিয়ে নিন। তেল ছেড়ে আসলে ফালি করা কাঁচামরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ দমে রেখে নামিয়ে ফেলুন।

নোনা ইলিশে বেগুন
===========================


উপকরণ :
১. নোনা ইলিশ ৪ টুকরা, ২. বেগুন ৫০০ গ্রাম, ৩. হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, ৪. মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, ৫. তেল ১ চা-চামচ, ৬. জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, ৭. কাঁচামরিচ ৪-৫টি, ৮. পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল চামচ, ৯. রসুনবাটা ১ চা-চামচ।

প্রণালি :
> নোনা ইলিশ পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। বেগুন টুকরা করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তেলে পেঁয়াজ অল্প ভেজে হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া ও রসুনবাটা দিয়ে কষান। ইলিশ ও বেগুন ঢেলে দিয়ে নাড়তে থাকুন। অল্প পানি দিয়ে ঢেকে দিন। বেগুন সেদ্ধ হলে জিরাগুঁড়া ও কাঁচা মরিচ দিন। নোনা ইলিশে পর্যাপ্ত লবণ থাকায় তরকারিতে লবণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

রূপচাঁদা শুটকির দোপেঁয়াজা
=================================


উপকরণ :
১. রূপচাঁদা শুটকি ১টি, ২. তেল পরিমাণ মতো, ৩. পেঁয়াজকুচি ২ কাপ, ৪. রসুনকুচি আধা কাপ, ৫. টমেটোকুচি আধা কাপ, ৬. সামান্য আদাবাটা, ৭. ধনিয়াগুঁড়া আধা চা-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ৩ চা-চামচ, ৯. হলুদগুঁড়া দেড় চা-চামচ, ১০. কাঁচামরিচ ৬টি, ১১. লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি :
> রূপচাঁদা শুটকি দুই ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। নরম হলে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে, ভালো করে ধুয়ে নিন। এবার প্যানে তেল দিন।
> তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি, সামান্য আদাবাটা, ধনিয়াগুঁড়া, মরিচ, হলুদ, তেল, লবণ, কাঁচামরিচ আর টমেটো-কুচি সব মসলা ভালো করে ভেজে নিন।
> পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে তাতে মাছ দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। এবার অল্প পানি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে ঢেকে দিন। পানি কমে মাখা মাখা হলে তাতে কাঁচামরিচ দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।