পা ফাটলে কোন ক্রিম ব্যবহার করবেন?
শীতকালে সাধারনত অনেক সমস্যার পাশাপাশি পা ফাটা নিয়েও ঝামেলায় পড়েন অনেকেই। কিন্তু সারাবছরই যদি পা ফাটা থাকে তবে তার কারণ খুঁজে বের করা আগে জরুরি । যেমন যদি কারো পা প্রাকৃতিক ভাবে শুষ্ক হয় তবে ফেটে যেতে পারে, কারণ পা ফাটা রোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে একে আর্দ্র রাখা। -দীর্ঘ সময় কোন শক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে থাকলে পা ফেটে যেতে পারে। -শরীরের অতিরিক্ত ওজন (overweight) পা ফাটার অন্যতম কারণ। এ সময় পা’কে শরীরের স্বাভাবিক ওজনের পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজনও বহন করতে হয় ফলে পা ফেটে যেতে পারে। -ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডে সমস্যা হলে পা ফেটে যেতে পারে। -বয়স বৃদ্ধির কারণেও (aging) পা ফাটতে পারে। কারণ অনুযায়ী সমাধান খুজতে হবে । তবে ঘরোয়া ভাবে পা ফাটার কিছু সমাধান দিলাম এখানে ।
১. স্পেশাল ফুট মাস্ক (special foot mask) একটি বড় পাত্রে হালকা গরম জলে এক চামচ লবণ, কয়েক টেবল চামচ লেবুর রস, ১-২ চামচ গ্লিসারিন এবং গোলাপ জল ভালভাবে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণে দুই পা কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। পা নরম হয়ে আসলে ফেটে যাওয়া চামড়ার অংশ ফুট স্ক্রাবার দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন।
২. পাকা কলা (ripe banana) পাকা কলা পা ফাটা সারিয়ে তুলতে পারে। পাকা কলা ভালভাবে চটকে পেস্টের মত তৈরি করুন। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে এই পেস্ট পায়ের ফাটা অংশে লাগান। কিছুদিনের মধ্যেই পা ফাটা সেরে যাবে।
৩. নিয়মিত তেল ব্যবহার (regular oil massage) পা যদি ঘন ঘন ফেটে যাওয়ার প্রবণতা থাকে তবে একে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। এক্ষেত্রে পায়ের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য তেল লাগাতে পারেন। অলিভ অয়েল এবং কাঠবাদাম তেল পায়ে মাখলে পা ফাটা ও জ্বালা পড়া দ্রুত সেরে যায় এবং ভবিষ্যতে পা ফাটার প্রবণতা হ্রাস পায়। তবে তেল অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে লাগাতে হবে।
৪. ভ্যাসলিন ও লেবুর রসের মিশ্রণ (Vaseline and oil juice mixture) পা ফাটা রোধের অনন্য সমাধান হতে পারে ভ্যাসলিন ও লেবুর রসের মিশ্রণ। হালকা গরম পানিতে ১৫-২০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। পা নরম হয়ে আসলে এতে এক চামচ পরিমাণ ভ্যাসলিন এবং ২-৩ টেবিল চামচ লেবুর রসের মিশ্রন লাগান। মিশ্রণটি এমন ভাবে লাগাবেন যেন তা পায়ের সব ফাটা স্থানে প্রবেশ করে।
৫. মধু (honey) পা ফাটে রোধে মধু কার্যকর ভূমিকা রাখে। আধা বালতি গরম পানিতে কিছুটা মধু মিশিয়ে এতে ১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। পা নরম হয়ে আসলে ধীরে ধীরে ফাটা চামড়াগুলো ফুট স্ক্রাবারের সাহায্যে তুলে নিন।
গ্লিসারিন ও গোলাপ জলের ফুট মাস্ক
পায়ের গোড়ালি ফাটা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে আপনি অনায়েসে এটি ফুট মাস্ক ব্যবহার করে দূর করতে পারেন।
পদ্ধতিঃ ফুট মাস্কের জন্য আপনার লাগবে লবন, লেবুর রস, গ্লিসারিন, গোলাপ জল ও কুসুম গরম পানি। একটি বড় পাত্রে ২ লিটার কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে ১ চা চামচ লবন, ১ টি গোটা লেবুর রস, ১ কাপ গোলাপ জল দিয়ে এতে পা ভিজিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। এরপর একটি মাজুনি কিংবা পেডিকিউরের পিউমিস স্টোন বা ঝামা ইট দিয়ে পায়ের গোড়ালি ভালো করে ঘষে শক্ত, মোটা ও মরা চামড়া তুলে পা ধুয়ে ফেলুন। এরপর ১ চা চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ গ্লিসারিন ও ১ চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে পায়ে লাগান। এভাবে রেখে দিন পুরো রাত। একটু চিটচিটে লাগতে পারে। কিন্তু আপনাকে সহ্য করে নিতে হবে। সকালে উঠে কুসুম গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যাবহারে ১০-১৫ দিনের মধ্যেই পা ফাটা গায়েব হয়ে যাবে।
নারকেল ও কলার ফুট মাস্ক
যদি পা ফাটা একটু বেশী খারাপ পর্যায়ে চলে যায় তবে এই ফুট মাস্কটি আজকে থেকেই প্রতিদিন ব্যাবহার করার চেষ্টা করুন। খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
পদ্ধতিঃ একটি কলা টুকরো করে নিন। এরপর তাজা ৩/৪ খণ্ড নারকেল নিন। দুটিতে একসাথে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি পায়ে লাগিয়ে নিন। বিশেষ করে ফাটা স্থানে ভালো করে লাগাবেন। শুকিয়ে উঠলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি হাতের কাছে তাজা নারকেল না পান তবে একটি কলা পিষে নিয়ে এতে ২/৩ চা চামচ নারকেল তেল দিয়ে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে লাগাতে পারেন।
প্রাকৃতিক স্ক্রাব ও তেল
পা ফাটা রোধের সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে প্রাকৃতিক স্ক্রাবের ব্যাবহার। ঘরোয়া ভাবে তৈরি এই স্ক্রাবটি প্রতিদিন ব্যাবহার করে খুব দ্রুত পা ফাটা রোধ করতে পারবেন। পদ্ধতিঃ স্ক্রাবটি তৈরি করতে আপনার লাগবে ২/৩ চা চামচ চাল, সাদা ভিনেগার ও মধু। প্রথমে চাল একটু ভিজিয়ে রেখে পিষে নিন। ব্লেন্ডারে দিয়ে অথবা শিল পাটায় বেটে নিতে পারেন। একটু দানা দানা করে চাল পিষে নেবেন। এরপর এতে পরিমাণ মত ভিনেগার ও মধু দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। একটি বড় পাত্রে কুসুম গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভেজা পায়ে ঘন পেস্টটি ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করে পা সেভাবেই রেখে দিন ১০ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ভালো করে মুছে নিন। তারপর খানিকটা অলিভ অয়েল গরম করে নিয়ে পায়ে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।
বাড়িতেও জুতা পরুন : খালি পায়ে বাড়ির বাইরে হাঁটা বা বাড়ির ভেতরে হাঁটা দুটোই সমান ক্ষতিকর। এর ফলে খুব সহজেই গোড়ালি ফাটতে পারে। এবং তা থেকে সংক্রমণ হতে পারে। তাই বাড়িতেও জুতো পরা বা পা ঢেকে রাখার অভ্যাস করুন।
পায়ের যত্নে গ্লিসারিন : পায়ের যত্নে গ্লিসারিনকে ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। গ্লিসারিন রুক্ষ ত্বকে এনে দেয় কোমলতা। অনেক সময় ঠাণ্ডার জন্য বা অন্য কারণে ত্বকের ওপরটা খসখসে হয়ে উঠতে শুরু করে। এই সময় গ্লিসারিন ব্যবহার করে দূর করতে পারেন ত্বকের এ খসখসে ভাব। এছাড়াও চর্ম রোগ সারাতেও বেশিরভাগ ওষুধেই গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সঠিক জুতা নির্বাচন : অনেকসময়ই মানুষ এমন জুতো ব্যবহার করে যা ভুল মাপের হয়। অনেকে জুতার মাপ বুঝতে না পেরে ছোট বা বড় মাপের জুতাও ব্যবহার করেন। এর প্রভাব পড়ে পায়ের গোড়ালিতে।আর পায়ের গোড়ালি ফাটার এটিও একটি কারণ হতে পারে।
পায়ের ব্যায়াম : পায়ের কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা গোড়ালি ফাটার সমস্যা দূর করতে পারে। ব্যায়াম করলে পায়ে রক্ত সঞ্চালনা বাড়বে এবং তার ফলে গোড়ালি ফাটার সমস্যা কমবে। এছাড়া বাড়িতেই ফাটা গোড়ালির সমস্যা দূর করতে চাইলে নিয়মিত ম্যাসাজ করতে পারেন। নিয়মিত পায়ের ম্যাসাজ করলেও পায়ে রক্ত সঞ্চালনা ভালো হয় এবং পা না ফেটে নরম ও মোলায়েম থাকে।