বড় পর্দায় আসছেন 'বউ কথা কও' এর মানালি
বাংলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ মানালি। সম্প্রতি তিনি একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে। ২৪ লাইভ বাংলা নিউজের দর্শকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো এই সাক্ষাৎকার।
কেমন আছেন?
• আমি তো সব সময় ভাল থাকি!
কথাটা কিন্তু বড্ড ক্লিশে...!
• বুঝতে পেরেছি, আপনি কাদের কথা বলছেন। আমি কিন্তু সত্যিই সব সময় ভাল থাকি! আমার খারাপ থাকাটা সাময়িক।
এত পজিটিভ এনার্জি পান কোথা থেকে?
• পুরোটাই দৃষ্টিভঙ্গির উপর! অনেকেই বলে, আশপাশে নাকি প্রচুর নেগেটিভিটি। কই আমি তো দেখতেই পাই না!
‘কুয়াশা যখন’এর কাজ শুরুর মুখে। ছবির গল্পটা কী রকম?
• যে বিষয়টাকে কেন্দ্র করে ছবিটা বানানো হচ্ছে, সেটা আমার বেশ লেগেছে। মীনাক্ষীদি এবং অভিষেকদা পুরো বিষয়টাকে অন্যরকমভাবে ভেবেছেন। গল্পে জমিদার বাড়ির বড় বউয়ের চরিত্রে অভিনয় করছি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না (হাসি)!
হালে ‘পরি’কে বাদ দিলে, সেক্স-হরর ফিল্ম আর সুপারন্যাচরাল ছবি প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে। তাই না?
• এটুকু বলতে পারি, ‘কুয়াশা যখন’এর ভূতগুলো দর্শককে ‘ভৌ-ভৌ’ করে ভয় দেখাবে না! হরর ফিল্মে ক্যামেরার কাজ দেখেই আমরা বুঝতে পেরে যাই, কোন দৃশ্যে ভূতটা আসবে! তবে এই ছবিটা দেখলে দর্শক সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা সুপারন্যাচরাল ছবির স্বাদ পাবেন।
ছোট পরদা, বড় পরদায় মিলিয়ে তো বেশ ভাল সময়ের মধ্যেই যাচ্ছেন...!
• (থামিয়ে দিয়ে) তাই নাকি? কে জানে! শুধু এটুকুই মনে হয়, এই তো সবে শুরু। এখনও অনেক পথ চলার বাকি। আমাদের জীবন খানিকটা নাগরদোলার মতো। আজকে নীচে, কালকে উপরে। তাই আমি বেশি টেনশন করি না!
২০১২ সালে ‘বউ কথা কও’ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও অবধি আপনি মৌরি’র হ্যাংওভার কাটিয়ে উঠতে পারেননি। হতাশ লাগে না?
• আমি যদি ‘বউ কথা কও’এ মৌরির চরিত্রে অভিনয় না করতাম, তাহলে আপনি আজ আমার এই সাক্ষাৎকারটাও নিতেন না। মীনাক্ষীদি-অভিষেকদা’ও ‘কুয়াশা যখন’এর জন্য আমাকে ভাবতেন না। শিবুদা এবং নন্দিতাদি’রাও (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়) আমাকে ডাকতেন না। আমার যাবতীয় পরিচিতি কিন্তু ওখানে থেকেই। প্রথম দিকে যখন মানুষ আমাকে মৌরি বলে ডাকত, ভাল লাগত! কিন্তু ধীরে ধীরে মনে হতে শুরু করল, মানুষ কেন আমাকে মানালি বলে চিনছেন না? এখন বাস্তবটা বুঝতে পারি! তবে একদম টেলিভিশন ফেস হয়ে যাওয়াটাও সমস্যার! তবে এই ব্যাপারটা ধীরে ধীরে এখন বদলাচ্ছে।
একটা সময় ধারাবাহিকের চরিত্ররা ধারাবাহিককেও ছাপিয়ে যেত। ‘বউ কথা কও’এর মৌরি। ‘ইষ্টি কুটুম’এর বাহা। ‘গানের ওপারে’র পুপে। এখন আর সে রকম দেখা যাচ্ছে না কেন?
• এই উত্তরটা আমারও জানা নেই। উত্তরটা চিত্রনাট্যকারেরা দিতে পারবেন। মানুষ কিন্তু ধারাবাহিক দেখছেন। সিরিয়ালগুলো ভাল টিআরপি’ও দিচ্ছে। আমাদের জেনারেশনের যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের শুরুটা কিন্তু অন্য রকমভাবে হয়েছিল! আমাদের সময় থেকেই বাড়ির অল্পবয়সি বউ দেখানোর কালচারটা শুরু হয়। সেটাই হয়তো দর্শকের ভাল লেগেছিল। তাই তাঁরা আমাদের মনে রেখেছেন। আমার তো মনে হয়, এক স্বামীর তিনটে বউ, শাশুড়ি-বউয়ের ঝামেলা— এগুলো দেখতে দর্শক ভালবাসেন! ‘বউ কথা কও’এর পর ‘সখী’ করেছিলাম। সম্পূর্ণ অন্য রকম একটা চরিত্র ছিল গল্পটায়। সেটা চলল কই!
দর্শক গ্রহণ করেন না বলেই কি নতুন ধারার ধারাবাহিক তৈরির সাহস দেখান না নির্মাতারা?
• পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা— সকলেই চান নতুন কিছু করতে। আমার কথাই ধরুন, ‘বউ কথা কও’এর পর এক বছর বিরতি নিয়ে ‘সখী’ করেছিলাম। তারপর ‘মহানায়ক’, ‘ভুলে যেও না প্লিজ’এর মতো ধারাবাহিক করেছি। প্রত্যেকটাই একে অপরের চেয়ে আলাদা। কিন্তু দেখেছি, গ্রামের এসেন্সটাই দর্শককে বেশি টানে। বাড়ির বউকে অত্যাচার করা হচ্ছে, তার গায়ে হাত তোলা হচ্ছে— এগুলো দর্শক দেখতে পছন্দ করেন।
আপনার বাবার (নিতাই দে) সম্পর্কে ইন্ডাস্ট্রির অনেকের একটা অভিযোগ রয়েছে...।
• (অবাক হয়ে) বাবা আবার কী করল?
অভিযোগ, অর্গানাইজার হিসেবে শো’এ আর্টিস্ট সরবরাহের ক্ষেত্রে উনি নাকি আপনাকে বেশি প্রাধান্য দেন। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন অন্য শিল্পীরা...।
• দেবের প্রযোজনায় ‘কবীর’ মুক্তি পাবে ১৩ এপ্রিল। ছবিতে রুক্মিণী নায়িকা কেন? চরিত্রটায় তো অন্য যে কেউ অভিনয় করতে পারতেন! দেবের সবক’টা হোম প্রোডাকশনে রুক্মিণীকেই কেন হিরোইন করা হয়? এসভিএফ’এরও কিছু প্রিয় নায়ক-নায়িকা রয়েছে। তাঁদের ছাড়া এসভিএফ’ও সচরাচর কাজ করে না। কই সেটা নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তোলে না! আর এক্ষেত্রে ব্যবসাটা তো আমার বাবার। তাই পোস্টারে আমার ছবিটাই বড় থাকবে, বাবা আমাকে নিয়েই বিজ্ঞাপন করবে— সেটাই তো স্বাভাবিক। বাবার কোম্পানিতে আমি এক্সক্লুসিভ হিসেবে কাজ করি। তাই বাড়তি গুরুত্ব পাই!
এই মুহূর্তে আপনার রিলেশনশিপ স্টেটাসটা কী?
• (মুচকি হেসে) কমিটেড!
অভিমন্যু (মুখোপাধ্যায়) কেমন আছেন?
• এই প্রশ্নের উত্তরটা তো ও-ই ভাল দিতে পারবে।
ইন্ডাস্ট্রিতে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে, অতীত তারকাদের পিছু ছাড়ে না...।
• কথাটা সত্যি! আমি জানি, আমার সাক্ষাৎকারে একটা প্রশ্ন অন্তত আমার অতীতকে নিয়ে থাকবেই। আমার আরও বেশি কাজ করা প্রয়োজন জানেন! আমাকে নিয়ে সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্ন নেই, তাই প্রাক্তনের প্রসঙ্গ বার বার সামনে আসে।
শুধুই চিত্রনাট্য? নাকি প্রোডাকশন হাউস-পরিচালক-প্রযোজক— এই ব্যাপারগুলোও আপনার কাছে ম্যাটার করে?
• চিত্রনাট্য নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। বাকিগুলোও ম্যাটার করে! একটা ছবি করলাম, দর্শক ছবিরও নামও জানতে পারল না— এই কাজগুলো করার অর্থ হয় না।
১৯৯৯ থেকে ২০১৮। এখনও আপনি ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গাটা ধরে রেখেছেন। কিন্তু নতুন অনেক অভিনেতাই সেটা পারছেন না...।
• আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসি, বাবা একটা কথা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘মেগা সিরিয়াল কাগজের ঠোঙার মতো। টেলিকাস্ট বন্ধ হলে দর্শক ধারাবাহিকের নামও ভুলে যাবেন’। কথাটা একেবারে মনের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা হোর্ডিংয়ে নিজের ছবি দেখেই ভেবে নেন, বিরাট কিছু একটা হয়ে গিয়েছি! আমি বিশ্বাস করি— অন্য কোনও দিকে মন না দিয়ে কেউ যদি নিজের কাজটা করে যান, তাহলে তিনি টিকে যাবেনই। কীভাবে অহংকার দেখাতে হয়, সেটা আমরা শিখিনি। সিনিয়রদের দেখে চেয়ার ছেড়ে দিয়েছি।
আপনি নাকি বোল্ড দৃশ্য করতে স্বচ্ছন্দ নন?
•নই তো! পরদায় চুমু খেতেও স্বচ্ছন্দ নই। চরিত্রের প্রয়োজনে আমি পোশাক খুলতে পারব না। অভিনেত্রী হিসেবে এটা আমার অক্ষমতা।
বিয়ের সিদ্ধান্তটা কি একটু তাড়াতাড়িই নিয়ে ফেলেছিলেন?
• (একটু থেমে) সেটা আমারও মনে হয়! সেই সময়ে দাঁড়িয়ে আমার বিয়ের সিদ্ধান্তটা সঠিক মনে হয়েছিল। তাই সপ্তককে (ভট্টাচার্য) বিয়েটা করেছিলাম। বিয়েটা ওয়ার্ক করেনি, সেটা অন্য ব্যাপার।
কোনও অনুষ্ঠানে প্রাক্তনের মুখোমুখি হলে অস্বস্তি হয়?
•কাউকে ‘হেট’ করাটাও একটা অনুভূতি। আমার তো ওর প্রতি কোনও অনুভূতিই নেই! ও অনুষ্ঠানে থাকুক, না থাকুক— কিছুতেই আমার কিছু যায় আসে না!
প্রাক্তনরা কি আদৌ ‘ভাল বন্ধু’ হতে পারেন?
•আমার ক্ষেত্রে তো পারে না (হাসি)!
মূল লেখা - এবেলা ডট ইন