চালের গুড়া মুখে মাখলে কি হয়?
চালের গুড়া বা চালের আটা যে শুধু খাদ্য চাহিদা মেটায়, তা কিন্তু নয়। ত্বকের পরিচর্যায় চালের গুড়া খুবই উপকারী। দিন শেষে বাসায় ফিরে আয়নার দিকে তাকালে সবার মনই কমবেশি খারাপ হয়ে যায়। দুষণের প্রভাব, ঘাম, তেল মিলে মুখের অবস্থা একদম ম্লান তেলতেলে হয়ে যায়।
চালের গুড়ার মাস্ক নিয়মিত ব্যবহারে এসব থেকে খুব সহজেই মুক্তি মিলবে। কিছু দিন পরেই নিজেই বুঝবেন স্কিনের পরিবর্তন। বিশেষ করে আমরা যারা ধৈর্য্য ধরে দীর্ঘমেয়াদি স্কিন কেয়ারের চিন্তাও করতে রাজি নই তাদের জন্য চালের গুড়া খুবই কাজের জিনিস।
চালের গুড়া যেভাবে কাজ করে :
# চালের গুড়ায় থাকে খুবই উচ্চমানের PABA (Para aminobenzonic acid), যা খুব ভালো সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। ফলে সূর্যের অতি ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত থাকে ত্বক।
# চালের গুড়ায় থাকা allantoin নামের উপাদান রোদে পোড়া ত্বক ঠিক করে ও ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সুন্দর করে।
# চালের গুড়ায় থাকা tyrosinase নামক উপাদান স্কিনের মেলানিন উৎপাদনের হার কমিয়ে আনে। এছাড়াও অতিরিক্ত অয়েল ও সেবাম উৎপাদন দূর করে।
# চালের গুড়ায় থাকে অতি উচ্চমানের ভিটামিন বি, যা ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ নতুন করে উৎপাদন করে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
# চালের গুড়া ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং ঝুলে পরা রোধ করে টানটান করে তুলে।
চালের গুড়া দিয়েকয়েকভাবে মাস্ক তৈরি করা যায়। তবে আজ তিনটি ফেসমাস্ক তৈরির নিয়ম দেখানো হলো। ত্বক থেকে দাগ-ছোপ দূর করবে, ফর্সা ও উজ্জ্বল হবে এবং ত্ব হবে টানটান।
চালের গুড়া, আটা ও দুধের মাস্ক :
এক চা চামচ চালের গুড়া, এক চা চামচ আটা, ১ চা চামচ গুড়া দুধ এবং দুই চা চামচ লিকুইড দুধ নিতে হবে।
সব উপাদান ভালো করে মিশাতে হবে। এরপর মুখ ধুয়ে মিক্সারটা মুখে ও গলায় লাগিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে ভালো করে। খেয়াল রাখতে হবে মুখে যেন কিছু থেকে না যায়। সপ্তাহে ২/৩ বার লাগাতে হবে মাস্কটা। এক মাসের মধ্যেই দেখবেন ত্বক ঝলমলে হয়ে উঠেছে।
চালের গুড়া, মুলতানি মাটি ও টমেটোর মাস্ক :
১ চামচ চালের গুড়া, আধা চা চামচ মুলতানি মাটি, আর টমেটোর রস ১ চা চামচ।
সব উপাদান একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মুখ ধুয়ে মাস্কটা মুখে ও গলায় লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি আপনার স্কিনের অতিরিক্ত তেল, সেবাম দূর করবে আর স্কিন হয়ে উঠবে উজ্জ্বল। এই মাস্কটিও সপ্তাহে ২/৩ দিন লাগাতে হবে। তবে খুব ভালো হয় যদি রোজ একবার লাগানো যায়।
চালের গুড়া ও অ্যালোভেরা মাস্ক :
এই মাস্কটি খুব ভালো এক্সফলিয়েটিং প্যাক হিসেবে কাজ করে। স্কিনের মরা চামড়া দূর করে খুব এফেক্টিভ-ভাবে। মিশ্রণটি তৈরি করতে এক চা চামচ চালের গুড়ার সঙ্গে দুই চা চামচ অ্যালোভেরার রস নিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে।
মিক্স করে মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। ২০ মিনিট পর মুখ পানি দিয়ে ভিজিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে মাস্ক তুলে ফেলতে হবে। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই বার মাস্কটি ব্যবহার করতে হবে।
যে কোনো হোমমেড মাস্কে সাধারণত কেমিক্যাল ফ্রি হয়। তাই এসব মাস্কের ফলাফল দেরিতে পাওয়া যায়। কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট খুব দ্রুত কাজ করে ঠিকই কিন্তু তার সাইড এফেক্টও থাকে। তাই সময় একটু বেশি লাগলেও কেমিক্যাল ফ্রি হোমমেড মাস্কগুলোই স্কিনের জন্যে ব্যবহার করা ভালো। এতে স্কিনের ক্ষতি তো হয়ই না বরং নিয়মিত ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদী ফল পাওয়া যায়।