বাড়িতে পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে তাঁকে। কোনও না কোনও একটি বা একাধিক খুঁত বের করে আপনাকে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘‘চলবে না।’’ এবার কোথায় যাবেন আপনি?

গোড়াতেই বলে রাখা ভাল, খারিজ হয়ে যাওয়ার পরেই তর্ক বা সটান চোখে জল আনবেন না। নিজেকে বলুন, ‘‘এটা তো হওয়ারই ছিল।’’ এই অবস্থায় বাড়ির লোক কেন আপনার প্রেমাষ্পদকে খারিজ করছেন,

সেই যুক্তিগুলি মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখুন, খারিজের যুক্তিগুলি কমবেশি একরকমের হয়ে থাকে। শুধু পাত্র বা পাত্রীর উপরে নির্ভর করে সেই সব যুক্তির বহিঃপ্রকাশ আলাদা হয়।

ধরা যাক, আপনার পছন্দের পাত্র বা পাত্রী চাকুরে। সে ক্ষেত্রে ‘‘ছেলের মাইনে ভাল নয়’’ বা ‘‘বাড়ির বউ চাকরি করবে না’’-গোত্রের উটকো যুক্তি আসতে পারে। তোলা হতে পারে তাঁদের পরিবারের প্রসঙ্গও। আরও ভাল পাত্র এবং পাত্রীর টোপ দেওয়া হতে পারে আপনাদের সামনে। তুলনামূলক আলোচনায় বোঝানো হতে পারে, কেন তাঁদের কথা শুনলে আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবেই।

এবার প্রশ্ন, আপনি কী করবেন?

প্রথমত, তাঁদের কথা শুনেই কোনও প্রতিক্রিয়া দেবেন না। চুপচাপ শুনবেন। তাঁদের যা যা বলার, তা বলতে দিন। সব শেষে তাঁরা আপনার কাছ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা ধরে নেন, আপনি তাঁদের যুক্তি খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দেবেন। কিন্তু আপনি তা করবেন না। আপনি খুব বেশি হলে ‘‘হুম’’ বা ‘‘ঠিক আছে’’-গোছের কথাবার্তা বলবেন।

দ্বিতীয়ত, এই বিষয়টি নিয়ে দু’জনে আলোচনা করবেন না। মনে রাখবেন, আপনারা যেটুকু সময় পাচ্ছেন, সেটুকু আপনাদেরই। তাই ভবিষ্যতে কী হবে, কী হবে না, সেই সব নিয়ে কল্প-আলোচনা করবেন না। বরং আত্মবিশ্বাস অটুট রাখুন। এই খারিজের ব্যাপারটি একটি সিনেমা বা টানটান নাটক হিসেবে ধরে নিন, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র আপনারা দু’জন।

তৃতীয়ত, অন্য পক্ষকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা ভুলেও করবেন না। ‘কুল’ থাকুন। খারিজ হয়ে গিয়েছেন শুনে একেবারে গোড়াতেই ফস করে তাঁদের বাড়ি চলে যাবেন না। বা, হবু শ্বশুরকে দড়াম করে ফোন করবেন না। নিজে শান্ত থাকুন, অন্যজনকেও শান্ত রাখুন।

চতুর্থত, বেশ কয়েক দিন পরে বাড়িতে শান্তভাবে নিজের যুক্তিগুলি পরপর সাজিয়ে দিন। এর মাঝে প্রেম নিয়ে কোনও কথাই বলবেন না। কেউ কিছু বললেও উত্তর দেবেন না। কিন্তু যে দিন আপনি বলবেন, সে দিন যেন সকলে আপনার কথা শোনেন। সেটি আগে বলে নিন। এইবারে শুরু হবে আলোচনা। যেভাবেই হোক, সুচিন্তিতভাবে যুক্তি পেশ করে নিজের বক্তব্য বোঝান।

এর পরে আনুন তাঁকে পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করানোর প্রসঙ্গ। সব শেষে বলুন, চাক্ষুষ দেখে নিতে। একবার এই প্রস্তাবে পরিবার রাজি হয়ে গেলে আপনি বুঝবেন, আপনার কাজ অর্ধেক এগিয়ে গেল।

একবার পরিবারের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেলে বাকিটা বেশ সহজ। ধীরে ধীরে দু’পক্ষকে কাছাকাছি আনুন। বাড়ির সরস্বতী পুজোয় হলদে শাড়ি পরে তাঁর আল্পনা আঁকা বা মেজোকাকার মেয়ের বিয়েতে বাকি ভাইদের সঙ্গে আরও দুটো মজবুত হাতের পিঁড়ি ধরা, এমন কোনও সুযোগই ছাড়বেন না।

নিশ্চিন্তে থাকুন, আপনার প্রেমের জয় হবেই। তবে, বিয়ের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে খুব ভাল করে বিবেচনা করে নিন। সামান্যতম ভুলের কিন্তু অতি বড় খেসারত দিতে হতে পারে। ফলে, যাঁকে বাছছেন, তাঁকে পরিবারের বাকিরাও পছন্দ করবেন কি না, পারলে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করুন। বিয়েটা কিন্তু দু’জনের ব্যাপার নয়। দু’টি পরিবারের ভাল-মন্দ জড়িয়ে রয়েছে এর সঙ্গে।