নতুন বছরের গোড়াতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন সঙ্ঘশ্রী সিংহ ও দেবদ্যুতি দেবনাথ। দু’জনই বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ। তবে শুধু সেটাই ওঁদের পরিচয় নয়। দেবদ্যুতি বাংলার বাইরে হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন। বাংলা টেলিভিশনে দেবদ্যুতির প্রথম কাজ জি বাংলার ধারাবাহিক ‘সতী’-তে। এছাড়া ‘বউ কথা কও’, ‘লোকনাথ’, ‘দুই ভুবনের পারে’ ও ‘রইল ফেরার নিমন্ত্রণ’-এ দেবদ্যুতিকে দেখেছেন বাংলার দর্শক। বাংলাদেশেও টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। আগামী বছরই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর ছবি ‘তেজ রফতার’। সতীশ কৌশিক, সমীর সোনি, হৃষিতা ভট্টের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন এই ছবিতে। এর আগেও অবশ্য ‘দ্য ব্ল্যাক ট্রুথ’ নামের একটি ছবি করেছেন। বিয়ের পরেও অভিনয় করবেন, এমনটাই ইচ্ছে তাঁর এবং শ্বশুরবাড়ির তরফ থেকেও কোনও আপত্তি নেই।

অন্যদিকে সঙ্ঘশ্রী কিন্তু তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন পর্দার পিছনে। সুদেষ্ণা রায়-অভিজিৎ গুহের সহকারী পরিচালক হিসেবেই পা রেখেছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। তার পরে রাজ চক্রবর্তীর সহকারী হিসেবে কাজ করতে করতেই ‘লে ছক্কা’ ছবিতে প্রথম অভিনয়। ‘অটোগ্রাফ’-এ সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে অ্য়াসিস্টও করেছেন, অভিনয়ও। তবে অভিনয়কে তখনও পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। তাই চার বছর একটি নামী এফএম চ্যানেলে রেডিও জকি হিসেবে কাজ করার পরে এগজিকিউটিভ প্রোডিউসারের পদে যোগ দেন বাংলার একটি নিউজ চ্যানেলে। এই বছরের মাঝামাঝি চাকরিজীবনকে বিদায় দিয়ে পুরোপুরি অভিনয়ে মন দিয়েছেন, পাশাপাশি অবশ্য় প্রযোজনার দায়িত্বও সামলাতে হয় তাঁকে। ফিল্ম, টেলিভিশন, ওয়েবসিরিজের কাজ চলছে একসঙ্গে। আবার জানুয়ারিতে বিয়ের আগেই রয়েছে ডবল ছবি রিলিজ। ‘বক্সার’ মুক্তি পাবে ৫ জানুয়ারি ও জিৎ-নুসরত ফারিয়ার ছবি ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’ মুক্তি পেতে চলেছে ১৭ জানুয়ারি।

এই দুই কন্যারই বিয়ে জানুয়ারিতে। ২৪ জানুয়ারি সঙ্ঘশ্রীর বিয়ে হবে তাঁর বাপের বাড়ির কাছেই বন্ধন ব্যাঙ্কোয়েটে এবং ২২ তারিখে দেবদ্যুতির বিয়ে হবে সোদপুরে। দেবদ্যুতির রিসেপশন ২৪ জানুয়ারি হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে। দু’জনেই শোনালেন তাঁদের বিয়ের গল্প—

‘‘জিৎদা চেয়েছেন যে দু’দেশের প্রিমিয়ারেই আমি থাকি। তাই আমি ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ যাচ্ছি, ২১ তারিখ সকালে ফিরছি। ওইদিনই আমার আইবুড়ো ভাত’’! প্রেম করে নয়, রীতিমতো খবরের কাগজ দেখে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করেই বিয়ে হচ্ছে সঙ্ঘশ্রীর। ‘‘সিম্পল নর্থ কলকাতার এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে যাকে সেলুন থেকে স্যাঁলো-তে কনভার্ট করেছি আমি,’’ বলতে বলতে হেসে ফেললেন তিনি। পাত্র শোভাবাজারের মিত্র বাড়ির ছেলে রোহন এবং ঘটনাচক্রে তিনি সঙ্ঘশ্রীর পুরনো কোম্পানিতেই চাকরি করেন।

আপাতত শপিং প্রায় শেষ। বিয়ের বেনারসীটি ইন্ডিয়ান সিল্ক হাউস থেকে নিজে উদ্যোগ নিয়ে কিনিয়ে দিয়েছেন গার্গী রায়চৌধুরী। তাছাড়া ‘সত্য পল’ ও ‘ঋতু কুমার’ থেকে শাড়ি কিনেছেন। এছাড়া বিয়ের অন্যান্য পোশাক ডিজাইন করেছেন সন্দীপ জয়সওয়াল। গয়না কেনা হয়েছে বি সি সেন ও এ সরকার জহুরি থেকে। তবে সঙ্গে ঠাকুমার কিছু পুরনো গয়নাও পরবেন সঙ্ঘশ্রী। এছাড়া অঞ্জলি জুয়েলার্স থেকে উপহার পেয়েছেন একটি বিশেষ গয়না কারণ ওদের জন্য প্রথম মুভি অ্যাড করেছিলেন তিনি। বিয়ের দিন তাঁকে সাজাবেন কালারস-এর জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মহাকালী’-র মেকআপ আর্টিস্ট লোকনাথ। আর রিসেপশনের দিন তাঁকে সাজাবেন বীথিকা বেনিয়া ও সীমা চুল।

এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে আইবুড়ো ভাত খাওয়া। আগামী শনিবার ‘দুপুর ঠাকুরপো’ টিমের পক্ষ থেকে আইবুড়ো ভাত খাওয়াবেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। আর বিয়ের ভোজটাও বেশ জম্পেশ হবে বলেই শোনা যাচ্ছে কারণ সঙ্ঘশ্রীর বিয়ের খাওয়াদাওয়ার দায়িত্বে রয়েছে বিখ্যাত মারুফাজ কেটারিং। এরা ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন কেটারিং সিস্টেম। সচরাচর এরা বাঙালি খাবারই পরিবেশন করে না কিন্তু সঙ্ঘশ্রীর বিয়েতে ভোজটা পুরোপুরি বাঙালি ভোজই হবে। হনিমুনে ‘বালি’ যাওয়ার কথা, যদি পাত্র ছুটি পান তবেই।

দেবদ্যুতির বিয়েও কিন্তু প্রেম করে নয়। তবে দেখেশুনে বিয়ে হলেও সম্বন্ধ হওয়ার পরে হবু স্বামীর সঙ্গে প্রেম করেছেন অভিনেত্রী। পাত্র উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সিদ্ধার্ত ভৌমিক। একটি কাজে উত্তরবঙ্গে গিয়ে আলাপ হয় দু’জনের। সেখান থেকেই ভাললাগার শুরু। তার পরে দেবদ্যুতি কলকাতায় ফিরে এলে, তিনিও চলে আসেন এবং সোজাসুজি বিয়ের কথা তোলেন। ‘‘আমি সোজা পাপার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ওকে। মেয়েদের ভালমন্দ তো পাপারাই বোঝে। পাপার সঙ্গে কথা বলে বিয়ের ঠিক হয়,’’ জানালেন দেবদ্যুতি, ‘‘তার পরে শুরু হয় প্রেম। ওর কলকাতায় কাজ থাকে তাই মাঝেমধ্যেই এখানে চলে আসত।’’ এছাড়া দূরভাষে, ভিডিও কলিংয়ে প্রেম তো রয়েছেই।

উত্তরবঙ্গে রিসেপশন হবে কিছুদিন পরে। বিয়ের দিন বেনারসী পড়ছেন দেবদ্যুতি আর রিসেপশনে লেহঙ্গা-চোলি। বিয়ে ও রিসেপশনের পোশাক ডিজাইন করেছেন সৌম্য নন্দী। বিয়েতে দেবদ্যুতি পড়ছেন অঞ্জলি জুয়েলার্সের গয়না ও রিসেপশনে পড়ছেন তানিশ্‌কের গয়না। বিয়ের দিন তাঁকে সাজাবেন নন্দ মজুমদার ও রিসেপশনে তাঁকে সাজাবেন অভিজিৎ চন্দ। তিনিও ইতিমধ্যেই আইবুড়ো ভাত খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন। হাতে মাত্র এক মাস বলা যায়।

নতুন জীবনের জন্য দুই কন্যাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

খবর - এবেলা