রুপচর্চায় যেভাবে কাজ করে মসুর ডাল
ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানা যায় যে প্রায় ৮০০০ বছর আগে থেকেই মধ্য এশিয়ার বাসিন্দারা মসুর ডাল খাওয়া শুরু করেছিলেন। কারণ সেই সময়ই তারা বুঝে গিয়েছিল যে প্রকৃতিক উপাাদনটিকে কাজে লাগিয়ে শরীরকে চাঙ্গা রাখা সম্ভব। আসলে এই ডালটির ভেতরে উপস্থিত প্রাটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কার্বোহাইড্রেড, ডায়াটারি ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ, সি,ই, কে এবং থিয়েমিন নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। সেই সঙ্গে ত্বকের অন্দরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানদের বের করে দিয়ে স্কিনকে সুন্দর করে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, নিয়মিত মসুর ডাল দিয়ে বানানো ফেস মাস্ক মুখে লাগাতে শুরু করলে ত্বকের ভেতরের প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়। ফলে স্কিনের ডালনেস কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠতেও সময় লাগে না। এখানেই শেষ নয়। মসুর ডাল আরও নানাভাবে ত্বকের উপকারে লেগে থাকে। যেমন- মসুর ডাল দিয়ে বানানো প্যাক মুখে লাগাতে শুরু করলে স্কিনের উপরিঅংশে জমে থাকা মৃত কোষের স্থর সরে যায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে বলিরেখা কমে, কালো ছোপ ছোপ দাগ কমতে শুরু করে এবং মুখের উপর থাকা অতিরিক্ত চুল ঝরে যায়।
মসুরেরর ডালে থাকা প্রোটিন এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান ষখন ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে, তখন এমন কারিশমা দেখায় যে ত্বকের টোনই বদলে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বক এমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে যে সৌন্দর্য আকাশ ছুঁতে সময় লাগে না।
প্রসঙ্গত, মসুর ডাল দিয়ে ফেসপ্যাক বানাতে গেলে প্রথমে ডালটি গুঁড়ো করে পাউডার বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পাউডারের সঙ্গে মেলাতে নিচের বর্ণিত উপাদানগুলো-
১. মসুর ডাল এবং মধু : আপনার ত্বক কি খুব শুষ্ক? সেই সঙ্গে বলি রেখাও দেখা দিতে শুরু করেছে? তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মসুর ডালের পাউডারের সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে নিয়ে নিয়মিত মুখে লাগাতে শুরু করুন। তাহলেই দেখবেন ধীরে ধীরে বলি রেখা কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে ত্বকের ড্রাইনেসও কমে যাবে। এক্ষেত্রে প্রথমে ১ চা চামচ মসুর ডাল পাউডারের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু মেশাতে হবে। এরপর ভাল করে দুটি উপাদান মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রনটি মুখে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট পেস্টটি মুখে ঘষার পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখটা দুয়ে নিলেই কেল্লাফতে!
২. মসুর ডাল, বেসন এবং দই : ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে বেসন এবং দইয়ের কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। তার উপর যদি এই মিশ্রনে অল্প করে মসুর ডাল মিশিয়ে দিতে পারেন, তাহলে তে কথাই নেই! কারণ এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে বানানো পেস্টটি এত মাত্রায় পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর হয় যে ত্বক সুন্দর হয়ে উঠতে সময়ই লাগে না। এখন প্রশ্ন হল, কী মাত্রায় এই তিনটি উপাদানকে মেশাতে হবে? এই পেস্টটি বানাতে প্রথমে ১ চা চামচ মসুর ডাল পাউডারের সঙ্গে সমপরিমাণ বেসন এবং দই মেশাতে হবে। সঙ্গে যোগ করতে পারেন অল্প করে হলুদও। এবার সবকটি উপাদান ভাল করে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। কিছু সময় অপেক্ষা করার পর মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
৩. মসুর ডাল এবং গাঁদা ফুল : পরিমাণ মতো মসুর ডাল পাউডারের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল মিশিয়ে ভাল করে বেটে নিয়ে এই পেস্টটি বানাতে হবে। তারপর সেটি কম করে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রসঙ্গত, ড্রাই স্কিনের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ব্রণর প্রকোপ কমাতে এবং ত্বককে নরম তুলতুলে করে তুলতেও এই ফেস মাস্কটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. মসুর ডাল আর দুধ : ত্বকের উপরের অংশে জমে থাকা মৃত কোষের স্তর সরিয়ে স্কিনকে প্রাণবন্ত করে তুলতে এই ফেসপ্যাকটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে দুবার পরিমাণ মতো মসুর ডালের পাউডারের সঙ্গে অল্প করে দুধ মিশিয়ে যদি মুখে লাগানো যায়, তাহলে ত্বকের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলা বা স্কিন বুড়িয়ে যাওয়ার মতো দুশ্চিন্তা একেবারে দূরে পালায়।
৫. মুখের চুল পরিষ্কার করে : অনেক মহিলাই আছেন যাদের মুখে অযাচিত চুল থাকে। এমন সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে ১ চামচ মসুর ডাল পাউডারের সঙ্গে ১ চামচ চালের পাউডার মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে যোগ করতে হবে ১ চামচ দুধ এবং বাদাম তেল। সবকটি উপাদান মেশানোর পর মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।